প্রেম করে বিয়ে না দেখাশোনা করে বিয়ে করলে বেশি সুখী হওয়া যায় ।
আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে দেখে শুনে বিয়ে করার সুফল যৌক্তিক কারণেই বেশি। তবে চিন্তা ভাবনা করে প্রেম করলে আলাদা কথা।
অস্বীকার করার উপায় নেই - যে বেশির ভাগ প্রেমের সম্পর্কই শুরু হয় আবেগের তাড়নায়। অনেকসময় এই আবেগ এতটাই তীব্র হয় যে মানুষ জীবনের ‘practical side’ ভুলে যায়। যেহেতু প্রেম করার আগে মানুষের বিয়ের অভিজ্ঞতা থাকে না - তাই এই অবস্থায় অনেক মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নেয় - পরে পস্তায়। কোনো সুশীলা শিক্ষিতা মেয়ে পাড়ার বখাটের হাত ধরে পালিয়ে গেছে - এমন দুই চারটি গল্প আমাদের সবার ই জানা আছে। গল্প সিনেমা তে প্রায় ই এই 'পালিয়ে যাওয়ার' কাহিনী বিয়েতেই ইতি হয়, আর ধরে নেয়া হয় নায়ক এবং নায়িকা 'অতঃপর সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল'। তাই প্রেমিক প্রেমিকারা মনে করে শুধুমাত্র প্রেম থাকলেই জীবনে সুখী হওয়া যায়।
বাস্তব দুনিয়া অনেক কঠিন জায়গা। জীবনটা রূপকথা না। বিবাহিত জীবনে সুখী হতে হলে প্রেম ভালোবাসা থাকা আবশ্যক - কিন্তু তার সাথে (যাদের পছন্দের বিয়ে হয় তাদের ও) অনেক ত্যাগ স্বীকারও করতে হয়। শুধুমাত্র স্বামী স্ত্রীর প্রতি ই না, তাদের বন্ধুবান্ধব,পরিবারের প্রতিও। দুটো পরিবারের চালচলন একরকম থাকলে আর বিয়ের সিদ্ধান্ত পরিবারের সবার কাছে গৃহীত হলে এই ত্যাগ স্বীকার করাটা তুলনামূলক ভাবে সহজ হয়।
উপমহাদেশের কনটেক্সট এ ধর্ম, বয়স, চিন্তাধারা, পারিবারিক অবস্থা এসব মাথায় রেখে পাত্র/পাত্রী নির্বাচন করা হয়। ধরা যাক, ধার্মিক পরিবারের বাবা মা তাদের সন্তানের ক্ষেত্রে ধার্মিক পাত্র/পাত্রীই নির্বাচন করেন। আজকাল সাধারণত দুইজনকে অনেকটা সময়ের জন্য পরিচিত হবার ও সুযোগ করে দেয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় অভিভাবক বা অন্যান্য শুভাকাংখীরাই এই নির্বাচন গুলো করেন , যাদের বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতা আছে।
পশ্চিমা বিশ্বে ছাড়াছাড়ি (বা ডিভোর্স) খুব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আমাদের দেশে ডিভোর্স হলে পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন সবাই এসে রসালো গল্প ফাদিয়ে (এবং প্রেম ছিল তাই এই অবস্থা) এসব শুনিয়ে চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে। আমাদের দেশে প্রেমের বিয়ের পর ছাড়াছাড়ি হওয়া (বিশেষ করে একটি মেয়ের জন্য) সামলানো খুব কঠিন। কল্পনা করেন যদি শ্বশুরবাড়ি কখনো তাদের ছেলের পছন্দ পছন্দ করেনি এবং এখন দাম্পত্য জীবন ভালভাবে চলছে না। তারা দায়িত্ব নিতে চাবে ? সম্ভবত না। এটি একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে মানুষকে ঠেলে দেয়। প্রেম করে বিয়ে করলে পরবর্তী কালে কোনো রকম দাম্পত্য জীবনে অশান্তি হলে দুই পক্ষের দুটি ভিন্ন সমাজের চিন্তা ভাবনা ভিন্ন হয় এই কারণে তার পরিণতি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। হ্যাঁ, এইসব জিনিস arranged marriage ও ঘটেছে কিন্তু আমাদের তথাকথিত hypocrite সমাজ এটি বুঝতে পারে না।
‘Practical side’ টাও চিন্তা করে, প্রেম করে বিয়ে করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচে' বেশি। তবে মানুষ কম্পিউটার না, যে এতো হিসাব নিকাশ করে মনের আদান প্রদান করবে। আর এতটা যান্ত্রিক হলে প্রেম করার অভিজ্ঞতাটাও এতো মিষ্টি হতো না!
0 Response to "প্রেম করে বিয়ে না দেখাশোনা করে বিয়ে করলে বেশি সুখী হওয়া যায় । "
Post a Comment